সোনার তরী কবিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
সোনার তরী কবিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রিয় পাঠক, আজকের এই ব্লগ পোষ্টে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সোনার তরী কবিতা শেয়ার করবো। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যেসব কবিতা শুধু শব্দে নয়, অনুভবে গড়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কবিতা তাদের মধ্যেই অন্যতম। এই কবিতায় প্রকৃতির রূপ, মানুষের মনের টানা পোড়েন, আশা নিরাশার খেলা এবং জীবনের গভীর দর্শন সবকিছুই অবিশ্বাস্য ভাবে একসূত্রে গাঁথা। কবিতাটি পাঠককে এমন এক আবহে নিয়ে যায় যেখানে মেঘলা শ্রাবণের বৃষ্টি, নদীর উত্তাল ঢেউ, চেনা-অচেনা মানুষ আর মনভরা আকাঙ্ক্ষা মিলেমিশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
সোনার তরী কবিতা শুধু প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা নয়, এটি মানুষের পরিশ্রম, ত্যাগ, অপ্রাপ্তি এবং ভাগ্যের নির্মম বাস্তবতাকে তুলে ধরে। কবিতার নায়ক তার সারা বছরের শ্রমে ফলানো ধান এক অপরিচিত তরীর কাছে তুলে দেয় শুধুমাত্র একটুখানি হাসি পাওয়ার আশায়। জীবনের মূল্যবান সম্পদ কখনো কখনো কেবল অনুভব, সম্পর্ক বা আবেগের কারণেই আমরা অন্যের হাতে তুলে দিই এই সত্যটাই রবীন্দ্রনাথ খুব নরম অথচ গভীরভাবে এই কবিতায় প্রকাশ করেছেন।
আজকের পাঠকের জন্যও সোনার তরী কবিতা ততটাই হৃদয় ছোঁয়া, যতটা ছিল শত বছর আগে। কারণ মানুষের অনুভূতি কখনো পুরোনো হয় না। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে জীবনের সোনার তরী কে আমাদের আপন জিনিস গুলো দিয়ে ভরাই হয় ভালোবাসা, হয় সময়, হয় বিশ্বাস। আর শেষে দাঁড়িয়ে দেখি সে তরী কোথায় ভেসে গেল।ঠিক এই কারণেই এই কবিতাটি শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, মানুষের মনেরও একটি চিরন্তন প্রতিচ্ছবি।
সোনার তরী কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা–
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু-ধারে–
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।
যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।
আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে–
এখন আমারে লহ করুণা করে।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি–
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
শেষকথা
সব মিলিয়ে সোনার তরী কবিতা আমাদের শেখায় জীবনের খুব সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ সত্য আমরা যতই আবেগে, আশা ও পরিশ্রমে জীবনকে ভরাই না কেন, শেষ পর্যন্ত সবকিছুই নিয়তির স্রোতে ভেসে যায়। কবিতার নায়ক যেভাবে তার সোনার ধান তরণীতে তুলে দিয়ে শেষে শুন্য নদীর তীরে একা দাঁড়িয়ে থাকে, ঠিক তেমনই জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায় ত্যাগ করতে, ছেড়ে দিতে, এবং আবার নতুন করে শুরু করতে।
এই কবিতা পাঠককে ভাবতে শেখায় কোন জিনিস গুলো সত্যি আমাদের, আর কোন গুলো আমরা কেবল সময়ের জোয়ারে কিছুক্ষণের জন্য ধরে রাখি। রবীন্দ্রনাথের ভাষা, প্রকৃতি, প্রতীক আর অনুভূতি মিশেলে সোনার তরী কবিতা এমন এক গভীর বোধ তৈরি করে যা পড়ার পরে সহজে ভুলে যাওয়া যায় না। বরং মনের ভেতর ঠিকই থেকে যায় জীবনের অদৃশ্য বাস্তবতা, ত্যাগের সৌন্দর্য এবং অপ্রাপ্তির কষ্ট।
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.
Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.
