কপোতাক্ষ নদ কবিতা | মাইকেল মধুসূদন দত্ত
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
কপোতাক্ষ নদ কবিতা | মাইকেল মধুসূদন দত্ত
প্রিয় পাঠক, আজকের এই ব্লগে কপোতাক্ষ নদ কবিতা শেয়ার করবো। বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক ও দেশাত্মবোধক কবিতার ধারায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাম উচ্চারণ করলেই যে কবিতার কথা সবার আগে মনে আসে, তা হলো কপোতাক্ষ নদ কবিতা। এই কবিতাটি কেবল একটি নদীকে কেন্দ্র করে লেখা নয় এটি এক কবির মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা স্মৃতি, শেকড়, দেশপ্রেম এবং ব্যক্তিগত বেদনার সার্থক প্রকাশ।
প্রবাসে থাকা যে কতটা কঠিন, কতটা নিঃসঙ্গতা ও স্মৃতির ভার নিয়ে চলে মধুসূদন দত্ত চেয়ে ভালো আর কে বুঝতে পারেন? নিজের জন্মভূমি, পরিচিত পরিবেশ, শৈশবের নদী আর দেশের মাটির গন্ধ এসব থেকে দূরে চলে গিয়ে তাঁর মনে যেন প্রতিদিনই ফিরে আসতো কপোতাক্ষ নদ। আর সেই স্মৃতিই পরবর্তীতে রূপ নিয়েছে এই অনন্য কবিতায়।
কপোতাক্ষ নদ কবিতা পাঠ করলে মনে হয় যেন আমরা নিজেরাও নদীর কলকল ধ্বনি শুনছি, নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বাতাসে ভেসে আসা স্মৃতির সুবাস অনুভব করছি। মধুসূদনের ব্যবহৃত শব্দচয়ন, আবেগ মাখা উপমা, মাতৃভূমির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা সব মিলিয়ে কবিতাটি হয়ে ওঠে পাঠকের কাছে এক চিরন্তন অভিজ্ঞতা।
বাংলাদেশের নদী ভিত্তিক কবিতার মধ্যে কপোতাক্ষকে নিয়ে এমন হৃদয় ছোঁয়া আবেগ আর কোথাও পাওয়া যায় না। কবিতাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে দেশ থেকে দূরে গেলেও মাটির টান কখনো মুছে যায় না, বরং দূরত্ব যত বাড়ে, মমত্ববোধ তত গাঢ় হয়।
আজকের প্রজন্ম, যারা হয়তো ব্যস্ততার কারণে সাহিত্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তারাও এই কবিতা পড়লে নিজেদের শেকড়ের প্রতি নতুন করে টান অনুভব করবে। তাই তোমার ওয়েবসাইটে কপোতাক্ষ নদ কবিতা যুক্ত করলে পাঠকেরা শুধু কবিতার সৌন্দর্যই উপভোগ করবে না, শিখবে ইতিহাস, অনুভব করবে মমতা, আর জানতে পারবে মধুসূদনের অন্তর্নিহিত যন্ত্রণার কথা যা সময়ের সঙ্গে হারায় না।
কপোতাক্ষ নদ কবিতা
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।
শেষকথা
সার্বিক ভাবে বলতে গেলে, মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ কবিতা শুধুমাত্র সাহিত্যকর্ম নয় এটি এক আবেগময় দলিল, এক স্মরণ সংগ্রহ, যেখানে প্রবাস জীবনের বেদনা আর মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা একই স্রোতে বয়ে যায়। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে লেখা হলেও এই কবিতার গুরুত্ব, সৌন্দর্য এবং অনুভূতি আজও অমলিন।
কবিতার প্রতিটি লাইনে ফুটে ওঠে দেশহারা এক সন্তানের মনের আর্তি। কপোতাক্ষ নদ যেন সেই মায়ের প্রতীক, যাকে দূরে রেখে কবি বেঁচে ছিলেন, কিন্তু ভুলে থাকতে পারেননি কখনোই। তাই তাঁর অশ্রুভেজা স্মৃতি, নদীর মায়াময় কলধ্বনি, মাতৃভূমির প্রতি গভীর টান সব কিছু মিলেই কবিতাটিকে চিরায়ত করেছে।
শেষমেশ, এই কবিতার গুরুত্ব শুধু সাহিত্যিক নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচয়েরও অংশ। কপোতাক্ষ নদ আমাদের দেশকে যেমন বয়ে নিয়ে চলে, তেমনই এই কবিতা আমাদের মনকে বয়ে নিয়ে যায় অতীতের স্মৃতিতে, ভালোবাসায় ও অমূল্য মানবিকতার দিকে।
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.
Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.
