কাজলা দিদি কবিতা | যতীন্দ্র মোহন বাগচী
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
কাজলা দিদি কবিতা | যতীন্দ্র মোহন বাগচী
প্রিয়পাঠক, এই ব্লগ পোষ্টে কাজলা দিদি কবিতা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। বাংলা শিশু সাহিত্যের কথা উঠলে আমাদের মনে সবচেয়ে আগে যে মধুর ও আবেগ ভরা কবিতা গুলোর কথা ভেসে ওঠে, তার মধ্যে কাজলা দিদি অন্যতম। যতীন্দ্র মোহন বাগচীর লেখা এই অমর কবিতাটি শুধু একটি বাচ্চার দিদিকে ডাকাডাকির গল্প নয় বরং এটি বাংলা গ্রামবাংলার চিরচেনা প্রকৃতি, পারিবারিক ভালোবাসা, এবং শৈশবের অনুভূতির এক চমৎকার চিত্র। শিশুমনের সরলতা, কৌতূহল আর মায়ামাখা আবেগ এই কবিতাকে যুগের পর যুগ ধরে পাঠকের হৃদয়ে জীবন্ত করে রেখেছে।
আজকের ডিজিটাল যুগে যখন মানুষ আমি হব সকাল বেলার পাখি কবিতা, শিশুতোষ ছড়া বা শৈশবের পাঠ্য কবিতার খোঁজ করেন, তখন কাজলা দিদি নামটি তাদের বিশেষভাবে মনে পড়ে। এই কবিতায় যেমন সকাল সন্ধ্যার প্রকৃতি আছে, তেমনই আছে দিদির প্রতি ভাইয়ের অমলিন ভালোবাসা। শিশুর চোখে চাঁদের আলো, বুলবুলির ডাক, জোনাকির ঝিলিমিলি সবই যেন এক অনাবিল গ্রামীণ চিত্র তুলে ধরে, যা বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সমানভাবে হৃদয় গ্রাহী।
কবিতাটি পড়তে পড়তে মনে হয় যেন আমরা নিজেরাই ফিরে গেছি ছোটবেলার সেই দিন গুলোতে যখন একটা প্রশ্নের উত্তর না পেলে মন খারাপ হয়ে যেত, বা প্রিয়জনকে না পেলে বারবার ডাকাডাকি করতাম। কাজলা দিদি কই? এই সহজ প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে আছে শিশুমনের গভীর প্রত্যাশা, আর সেই প্রত্যাশাই কবিতার আবেগকে আরও জোরালো করে।যারা বাংলা কবিতা ভালোবাসেন, শিশুদের পড়ার মতো ছড়া খুঁজছেন, বা স্কুল প্রজেক্টের জন্য সুন্দর ও আবেগঘন কবিতা সংগ্রহ করছেন তাদের জন্য এই কবিতা অবশ্যই পড়ার মতো।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা
কাজলা দিদি কবিতা
যতীন্দ্র মোহন বাগচী
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো,
আমি ডাকি, – তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে-
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে!
ভূঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
দিস না তারে উড়িয়ে মা গো ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল|
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে;
নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই;
রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
শেষকথা
কাজলা দিদি কবিতার আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তার আবেগময় কথন ভঙ্গি এবং শিশুর সাথে দিদির আন্তরিক সম্পর্কের মাঝে। কবিতার প্রতিটি স্তবক যেন একটি গল্প বলে একটি অপেক্ষার, একটি অস্থিরতার, এবং প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার গভীর আকাঙ্ক্ষার। এই অনুভূতি গুলো এতটাই প্রাণবন্ত যে পাঠক অনায়াসেই সেই শিশুটির অবস্থান অনুভব করতে পারে।
জোনাকির আলো, নেবুর গন্ধ, পুকুরের নিস্তব্ধতা, বাঁশবাগান এই সমস্ত গ্রামীণ উপাদান কবিতাকে করে তোলে আরও জীবন্ত। পাঠক যেন চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্যগু লো দেখতে পান। আর সেই শিশুটির প্রশ্ন মাগো, আমার কাজলা দিদি কই? এই লাইনটি বারবার ফিরে আসে, যা কবিতার আবেগকে আরও গভীর করে দেয়।
আজকের দিনে যখন মানুষ আমি হব সকাল বেলার পাখি কবিতা বা অন্য কোনো শিশুতোষ কবিতার খোঁজে আসে, তখন কাজলা দিদি তাদের কাছে শৈশবের দরজা খুলে দেয়। এমন কবিতা শুধু পড়া যায় না অনুভব ও করা যায়, হৃদয়ে ধরে রাখা যায়। শিশুদের শেখানোর জন্য, কিংবা নিজের পড়ার জন্য এই কবিতাটি সবক্ষেত্রেই সমান প্রাসঙ্গিক ও সুন্দর।
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.
Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.
