মোবাইল অফিসিয়াল চেক | আনঅফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়

আজকের ব্লগে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় শেয়ার করবো। মোবাইল অফিসিয়াল চেক, আনঅফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়। কিভাবে আপনার ব্যবহৃত ফোনটি অফিসিয়াল নাকি আনঅফিসিয়াল

মোবাইল অফিসিয়াল চেক  | আনঅফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়

প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় শেয়ার করবো। মোবাইল অফিসিয়াল চেক, আনঅফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়। কিভাবে  আপনার ব্যবহৃত ফোনটি অফিসিয়াল নাকি আনঅফিসিয়াল কিভাবে জানবেন সে সর্ম্পকে বিস্তারিত জানবো। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে প্রচুর স্মার্টফোন পাওয়া যায়, এবং একই মডেলের ফোন দুই ভিন্ন দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।

একটি বলা হয় অফিসিয়াল এবং অন্যটি আন-অফিসিয়াল বা গ্রে মার্কেট। যে কেউ প্রথমবার ফোন কিনতে গেলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। বাহ্যিকভাবে একই রকম হলেও দুটি ফোনের মান, সার্ভিস এবং নিরাপত্তার বিষয়ে পার্থক্য বেশ বড়। এই বিভ্রান্তি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মোবাইল অফিসিয়াল চেক করা।

মোবাইল অফিসিয়াল চেক

অফিসিয়াল ফোনের IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর সরকারী সিস্টেমে নিবন্ধিত থাকে এবং ফোন কেনার পর যেকোনো সমস্যায় অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার আপনাকে সাপোর্ট দেয়। তাই অফিসিয়াল ফোন কেনা মানে শুধু ডিভাইস কেনা নয়, বরং দায়িত্ব, নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা কেনা।

মোবাইল অফিসিয়াল চেক বলতে কী বোঝায়?

প্রতিটি ফোনের একটি ইউনিক IMEI নম্বর থাকে, যা ফোনের পরিচয়ের মতো কাজ করে। মোবাইল অফিসিয়াল চেক বলতে বোঝায়, ফোনটির IMEI নম্বর সরকার বা ব্র্যান্ডের ডাটাবেজে নিবন্ধিত আছে কিনা এবং ফোনটি আইনসম্মতভাবে দেশে আমদানি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা। মোবাইল অফিসিয়াল হলে বুঝতে হবে ফোনটির জন্য কাস্টমস ডিউটি ও ট্যাক্স প্রদান করা হয়েছে এবং ফোনটি নেটওয়ার্ক ব্লক হওয়ার ঝুঁকি মুক্ত।

আন-অফিসিয়াল ফোনে প্রায়ই একই IMEI নম্বর ক্লোন করে বহু ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়, ফলে ফোনটি কোনোদিন ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে যেতে পারে। তাই অফিসিয়াল চেক না করে ফোন কেনা মানে ভবিষ্যতের ঝুঁকি আমন্ত্রণ করা।

কেন মোবাইল অফিসিয়াল চেক করা অত্যন্ত জরুরি?

ফোন কিনতে গিয়ে অনেকেই মূল মূল্য দেখে শুধু বাজেটের দিকেই মনোযোগ দেন। কিন্তু কম দামে আন-অফিসিয়াল ফোন কেনার ফলে ভবিষ্যতে নেটওয়ার্ক না পাওয়া, ওয়ারেন্টি না মেলা এবং সার্ভিস সেন্টার সাপোর্ট না পাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে এখন BTRC আন-অফিসিয়াল IMEI ব্লক করে দেয়।

যার ফলে ফোনটি যদিও দেখতে একদম নতুন, তবুও কিছুদিন পর সিম কার্ড কাজ করবে না। তখন ফোনটি শুধু ওয়াইফাই ব্যবহারযোগ্য একটি ডিভাইসে পরিণত হবে। তাই মোবাইল অফিসিয়াল চেক করা মানে নিজের টাকা এবং সময় দুটোই সুরক্ষিত রাখা।

কীভাবে মোবাইল অফিসিয়াল চেক করবেন?

প্রথমে ফোনের IMEI নম্বর জানতে হবে। ফোনে *#06# ডায়াল করলে স্ক্রিনে IMEI নম্বর দেখা যাবে। এরপর বাংলাদেশ সরকারের NEIR (National Equipment Identity Register) সাইটে গিয়ে IMEI নম্বর যাচাই করা যায়। ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো এইখানে চাপ দিন। এখানে IMEI নম্বর লিখে চেক করলে তা Valid, Invalid বা Pending দেখাবে। Valid হলে ফোন অফিসিয়াল।

Invalid হলে ফোন আন অফিসিয়াল অথবা রেজিস্টার হয়নি। Pending হলে ফোনটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমা আছে কিন্তু অনুমোদন সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া ব্র্যান্ড ওয়েবসাইট থেকেও ওয়ারেন্টি অ্যাকটিভেশন চেক করা যায়, যা নিশ্চিত করে ফোনটি নতুন নাকি refurbished।

অফিসিয়াল ফোনের ওয়ারেন্টি এবং আফটার-সেল সাপোর্ট

অফিসিয়াল ফোন কেনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্র্যান্ডেড সার্ভিস সেন্টারের নিশ্চিন্ত ওয়ারেন্টি সুবিধা। অফিসিয়াল ফোনে ওয়ারেন্টি দাবি করা যায় এবং যন্ত্রাংশ পরিবর্তন বা সফটওয়্যার সাপোর্ট পাওয়া যায়। আন-অফিসিয়াল ফোনে সাধারণত দোকানদার নিজস্বভাবে কিছু দিনের সার্ভিস দেয়, যা কোনো বাস্তব ওয়ারেন্টি নয়। ফোনের ব্যাটারি বা মাদারবোর্ডে সমস্যা হলে দোকানদার দায় এড়াতে পারে, কিন্তু অফিসিয়াল ফোনে কোম্পানি দায়িত্বশীল থাকে। তাই মোবাইল অফিসিয়াল চেক শুধু ফোন যাচাই নয়, বরং সঠিক পরবর্তী-সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা।

আন-অফিসিয়াল ফোন কেনা কি আসলেই লাভজনক?

অনেকেই মনে করেন, আন-অফিসিয়াল ফোনে টাকা বাঁচে এবং সব ফোন একই এই ধারণা ভুল। আন-অফিসিয়াল ফোন অনেক সময় refurbish করা থাকে, অর্থাৎ পূর্বে ব্যবহৃত বা রিটার্নকৃত ফোন ঠিকঠাক করে আবার বিক্রি করা হয়। বাহ্যিকভাবে নতুন হলেও এর লাইফটাইম কম থাকে এবং হার্ডওয়্যার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া নেটওয়ার্ক ব্লক হওয়ার ঝুঁকি তো আছেই। তাই কম দামে ফোন পেয়ে স্বস্তির অনুভূতিটি বেশিদিন থাকে না। এর চেয়ে বরং প্রথমে মোবাইল অফিসিয়াল চেক করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

অফিসিয়াল মোবাইলের সুবিধা ও অসুবিধা 

অফিসিয়াল মোবাইল ব্যবহার করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়। ফোনটি বৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে এবং সরকারের অনুমোদিত ডাটাবেজে রেজিস্টার্ড। সার্ভিস সেন্টার দায়িত্ব নেয় এবং যেকোনো হার্ডওয়্যার সমস্যায় আসল পার্টস দিয়ে মেরামত করে। সফটওয়্যার আপডেট নিয়মিত আসে এবং নেটওয়ার্ক সমস্যার ঝুঁকি নেই। ব্যবসা, কাজ বা গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগে নির্ভরযোগ্যতা যে কত বড় বিষয় তা আমরা সবাই জানি, আর অফিসিয়াল ফোন সেই নিশ্চয়তা দেয়।

যদিও অফিসিয়াল ফোনের দাম আন-অফিসিয়াল ফোনের তুলনায় কিছুটা বেশি, কারণ এতে ট্যাক্স ও ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অফিসিয়াল ফোনই লাভজনক, কারণ সার্ভিস সাপোর্ট, রিসেল ভ্যালু এবং ব্যবহারিক নিরাপত্তা একেবারে পরিষ্কার। অফিসিয়াল ফোন চেনার সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো মোবাইল অফিসিয়াল চেক অর্থাৎ IMEI যাচাই করা। দোকানদারের কথা বা স্টিকার দেখে সিদ্ধান্ত না নিয়ে IMEI যাচাই করুন এবং নিশ্চিন্তে ফোন কিনুন। মনে রাখবেন, অফিসিয়াল ফোন খরচ নয় এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগ।

শেষকথা

স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, কাজ, ব্যবসা, স্মৃতি, নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সম্পূর্ণ এক ডিজিটাল ভল্ট। তাই এমন একটি ডিভাইস কেনা উচিত যা আইনত বৈধ, নিরাপদ এবং ব্র্যান্ড কর্তৃক সমর্থিত। ফোন কেনার আগে সর্বদা মোবাইল অফিসিয়াল চেক করুন, IMEI যাচাই করুন এবং ওয়ারেন্টির সত্যতা নিশ্চিত করুন। অফিসিয়াল ফোন মানে আপনি নিশ্চিন্ত, ভবিষ্যতে কোনো সার্ভিস সমস্যা বা নেটওয়ার্ক ব্লকের ঝুঁকি নেই। অফিসিয়াল ফোন আপনার টাকার পূর্ণ মূল্য দিতে বাধ্য।

Disclaimer
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.

Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.

আইটি বিতান
Nilasha Barua

হাই! আমি নিলাশা, প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখি। পাঠকের জন্য সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য।নতুন তথ্য শেয়ার করতে এবং পাঠকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পছন্দ করি।

1 comment

  1. Anonymous
    খুবই উপকৃত হলাম।