যান্ত্রিক সংহতি কাকে বলে
আজকের ব্লগ আর্টিকেলে যান্ত্রিক সংহতি কি , যান্ত্রিক সংহতি কাকে বলে এই সব জানার চেষ্টা করবো আপনাদের সাথে। সমাজে ঐক্য বা সংহতির যে রূপে মানুষরা একই ধরনের কাজ করে, একই রকম বিশ্বাস ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী থাকে, তাকে যান্ত্রিক সংহতি বলে। সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুর্খেইম (Émile Durkheim) প্রথম সমাজে সংহতির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই ধারণাটি ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, সমাজে সংহতি বা ঐক্যের দুটি ধরন আছে যান্ত্রিক সংহতি এবং জৈবিক সংহতি। এর মধ্যে যান্ত্রিক সংহতি হলো সেই সমাজের বৈশিষ্ট্য যেখানে মানুষ একে অপরের সঙ্গে খুব সাদৃশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করে এবং একই বিশ্বাসে আবদ্ধ থাকে।
যান্ত্রিক সংহতির অর্থ
যান্ত্রিক সংহতি এমন এক ধরনের সামাজিক ঐক্য, যেখানে সমাজের সদস্যরা প্রায় একই রকম কাজ করে, একই চিন্তাধারায় বিশ্বাসী থাকে এবং একই প্রথা, ধর্ম ও সংস্কৃতির অধীনে জীবনযাপন করে। এই সমাজে ব্যক্তিগত চেতনার তুলনায় সামষ্টিক চেতনা বা সমষ্টিগত বিশ্বাস বেশি প্রভাবশালী হয়। সমাজের নিয়মকানুন, রীতিনীতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধই সমাজের সদস্যদের মধ্যে একাত্মতার বন্ধন সৃষ্টি করে।
যান্ত্রিক সংহতির বৈশিষ্ট্য
যান্ত্রিক সংহতি সাধারণত দেখা যায় প্রথাগত বা গ্রামীণ সমাজে, যেখানে মানুষের কাজ ও জীবনধারা প্রায় একই রকম। এই সমাজে সামাজিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও নৈতিকতার ভিত্তিতে সবাই একত্রিত থাকে। এখানে শ্রমের বিভাজন খুবই সীমিত, অর্থাৎ সবাই একই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সমাজে নিয়ম ভঙ্গ বা প্রথা অমান্য করা বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এমন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। এই সমাজে মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ও আবেগপূর্ণ হয়।
যান্ত্রিক সংহতির উদাহরণ
যান্ত্রিক সংহতির সবচেয়ে ভালো উদাহরণ পাওয়া যায় একটি গ্রামীণ সমাজে। গ্রামের মানুষ সাধারণত কৃষিকাজ, পশুপালন বা অনুরূপ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে। তারা একই ধর্ম ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে, একই উৎসব পালন করে এবং একে অপরের সুখ-দুঃখে অংশ নেয়। তাছাড়া, উপজাতীয় সমাজে ও এই সংহতি দেখা যায়, যেখানে সমাজের প্রতিটি সদস্য প্রায় একইভাবে জীবনযাপন করে এবং তাদের মধ্যে ঐক্যের মূল ভিত্তি হলো সাদৃশ্য।
যান্ত্রিক সংহতি ও জৈবিক সংহতির পার্থক্য
যান্ত্রিক সংহতি মূলত প্রথাগত সমাজে দেখা যায়, আর জৈবিক সংহতি দেখা যায় আধুনিক ও শিল্পায়িত সমাজে। যান্ত্রিক সংহতির সমাজে মানুষরা একই ধরনের কাজ করে এবং ঐক্যের উৎস হলো সাদৃশ্য। অন্যদিকে, জৈবিক সংহতির সমাজে কাজের বিভাজন অনেক বেশি, ফলে মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়, এবং ঐক্যের উৎস হয় পারস্পরিক সহযোগিতা। যান্ত্রিক সংহতির সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হয় প্রথা ও ধর্মের মাধ্যমে, আর জৈবিক সংহতির সমাজে আইন ও সংগঠিত প্রতিষ্ঠান সেই ভূমিকা পালন করে।
শেষকথা
সবশেষে বলা যায়, যান্ত্রিক সংহতি হলো সমাজের এমন এক ঐক্য যেখানে মানুষের মধ্যে সাদৃশ্যই সমাজের শক্তির মূল ভিত্তি। এটি ঐতিহ্যনির্ভর, প্রথাগত এবং একরূপ জীবনযাপন করা সমাজে বিদ্যমান থাকে। এমিল দুর্খেইম এই ধারণার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে সমাজের সংহতি সময় ও উন্নয়নের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। প্রাথমিক সমাজে যেখানে যান্ত্রিক সংহতি সমাজের ভিত্তি ছিল, আধুনিক সমাজে সেখানে তার স্থান নিয়েছে জৈবিক সংহতি, যা পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহযোগিতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
.png)