ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি ও প্রতিকারের উপায়

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানবো আজকের এই ব্লগে। বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস এমন এক নীরব ঘাতক, যা অজান্তেই একজন মানুষের

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি ও প্রতিকারের উপায়

প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে গুরুত্বপূর্ণ টপিক শেয়ার করবো, ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানবো আজকের এই ব্লগে। বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস এমন এক নীরব ঘাতক, যা অজান্তেই একজন মানুষের শরীরের ভেতর ধীরে ধীরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায়। একে মধুমেহ ও বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৫০ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এবং বাংলাদেশে ও প্রায় এক কোটি মানুষ এই রোগের মধ্যে রয়েছেন।

ডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। অনেক সময় মানুষ প্রথম দিকে এর কোনো লক্ষণ বুঝতে পারেন না, ফলে রোগটি অজান্তেই দীর্ঘদিন ধরে শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা, এর লক্ষণ জানা এবং প্রতিকার জানা খুবই জরুরি

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

ডায়াবেটিস কী এবং কেন হয়

ডায়াবেটিস মূলত একটি বিপাকজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ। আমাদের শরীর ইনসুলিন নামক একধরনের হরমোনের মাধ্যমে রক্তের গ্লুকোজ বা চিনি নিয়ন্ত্রণ করে। এই ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি শরীরের কোষে গ্লুকোজ প্রবেশে সাহায্য করে যাতে গ্লুকোজ শক্তি হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু যখন অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, অথবা শরীর তৈরি করা ইনসুলিন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না, তখন রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে যায়। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিস সাধারণত তিন প্রকারের হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত কম বয়সে দেখা দেয়, যেখানে শরীর একদমই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না এবং রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যা সাধারণত বয়স, ওজন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাপনের কারণে হয়। আরেকটি হলো গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, যা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে স্থায়ী ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

ডায়াবেটিসের লক্ষণ অনেক সময় ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রোগী প্রথম দিকে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন অনুভব করেন না। তবে কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি।

ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণের একটি হলো অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। শরীর রক্তের অতিরিক্ত চিনি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চায়, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। এই ঘাটতি পূরণে শরীর বেশি পানি চায়, ফলে সারাক্ষণ তৃষ্ণা অনুভূত হয়।

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, খাওয়ার পরও দ্রুত ক্ষুধা লাগে। কারণ, শরীর গ্লুকোজ ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে কোষ পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, ফলে শরীর আরও খাবারের দাবি জানায়। এর পাশাপাশি দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের আরেকটি বড় লক্ষণ। শরীর যখন গ্লুকোজ থেকে শক্তি না পায়, তখন এটি চর্বি ও পেশি ভাঙতে শুরু করে, যার ফলে ওজন হঠাৎ করে কমে যায়।

অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অবসন্নতা ও ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। পর্যাপ্ত শক্তি না পাওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। একই সঙ্গে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, বিশেষ করে হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখলে সেটিও ডায়াবেটিসের একটি প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে। কারণ, রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ চোখের লেন্সে পানি টেনে নেয়, যার ফলে দৃষ্টি সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হয়।

আরেকটি লক্ষণ হলো ক্ষত বা কাটা সারতে দেরি হওয়া। ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়, যার ফলে ছোট ক্ষত ও সারতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া ত্বকে কালচে দাগ, বিশেষ করে গলা বা বগলের পাশে, দেখা দিতে পারে যা ইনসুলিন প্রতিরোধের লক্ষণ। হাত-পা ঝিনঝিন করা বা অবশ লাগাও দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিসে স্নায়ু ক্ষতির কারণে হতে পারে। এছাড়া অনেক সময় রোগীরা ঘন ঘন সংক্রমণে ভোগেন, যেমন ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা প্রস্রাবে সংক্রমণ।

ডায়াবেটিস নির্ণয়ের উপায়

ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিলে একমাত্র সঠিক উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা করা। সাধারণত চারটি পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হয়। ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজ টেস্টের মাধ্যমে খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ মাপা হয়। যদি ফলাফল ১২৬ mg/dl বা তার বেশি হয়, তাহলে ডায়াবেটিস ধরা যায়। HbA1c টেস্টে গত দুই থেকে তিন মাসের গড় রক্তে চিনি পরিমাণ দেখা যায়। যদি এই মান ৬.৫% বা তার বেশি হয়, তাহলে সেটিও ডায়াবেটিস নির্দেশ করে।

র‌্যান্ডম ব্লাড সুগার টেস্ট যেকোনো সময় করা যায়, খাওয়ার পরে ও। এর মান যদি ২০০ mg/dl বা তার বেশি হয়, সেটি ও ডায়াবেটিসের লক্ষণ নির্দেশ করে। আর ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্টে রোগীকে গ্লুকোজ খাওয়ানোর পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্তে চিনি মাপা হয়, যা শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া বোঝায়। এসব পরীক্ষার ফলাফল ডাক্তার মূল্যায়ন করে নির্ধারণ করেন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা বা প্রিডায়াবেটিক অবস্থায় আছেন কিনা।

ডায়াবেটিস প্রতিকারের উপায়

ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে সারানো সম্ভব না হলেও এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিয়মিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসা অনুসরণ করলে একজন ডায়াবেটিস রোগীও সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

প্রথমেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। মিষ্টি, চিনি ও সাদা চাল কমাতে হবে। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে আঁশযুক্ত খাবার যেমন সবজি, ডাল, ওটস, মাছ ও ব্রাউন রাইস খাওয়া উচিত। খাবার একবারে বেশি না খেয়ে দিনে কয়েকবার অল্প অল্প করে খেলে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি, কারণ এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া সচল রাখে।

শরীরচর্চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি। প্রতিদিন কমপক্ষে আধঘণ্টা দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। একই সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওজন বেড়ে গেলে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, ফলে গ্লুকোজ বাড়ে। তাই ওজন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে হবে।

মানসিক চাপ কমানোও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসিক উদ্বেগ বা ঘুমের অভাব শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে, যা রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো, ধ্যান বা মেডিটেশন করা উপকারী।

যদি জীবনযাপন পরিবর্তনেও নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা ইনসুলিন নিতে হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের অনেক সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া হয়, যেমন মেটফর্মিন, আর টাইপ ১ রোগীদের নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা উচিত নয়, কারণ এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত যত্ন

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে প্রতিদিন নিজের যত্ন নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময় ওষুধ খাওয়া, রক্তে শর্করা মাপা, চোখ, কিডনি ও পায়ের নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। পায়ে কোনো কাটা, ঘা বা ফোসকা হলে তা অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ ক্ষত দ্রুত সংক্রমিত হয়। পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি এবং পরিবারের সহায়তা ডায়াবেটিস রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

শেষকথা,

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা একবার শুরু হলে আজীবন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তবে এটি কোনো মৃত্যুদণ্ড নয়। সচেতনতা, নিয়মিত পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে জানা এবং নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া। যদি আপনি কোনোভাবে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ অনুভব করেন, তবে অবহেলা না করে আজই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে ডায়াবেটিসের ভয়ঙ্কর জটিলতা থেকে সহজেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

ডিসক্লেইমার: এই ব্লগে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এটি কোনো ভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ বা নির্দিষ্ট চিকিৎসার বিকল্প নয়। আপনার যদি ডায়াবেটিস বা অনুরূপ কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

Disclaimer
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.

Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.

আইটি বিতান
Nilasha Barua

হাই! আমি নিলাশা, প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখি। পাঠকের জন্য সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য।নতুন তথ্য শেয়ার করতে এবং পাঠকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পছন্দ করি।

Post a Comment