বনলতা সেন কবিতা
প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে বনলতা সেন কবিতা টি শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতা বাংলা সাহিত্যের এমন এক সৃষ্টি, যেখানে ক্লান্ত মানুষ খুঁজে পায় এক মুহূর্তের শান্তি ও মমতার আশ্রয়।এই কবিতায় কবি যেন সময়, ইতিহাস আর জীবনের অন্ধকার ভেদ করে পৌঁছেছেন এক চিরচেনা অথচ অদেখা পৃথিবীতে যেখানে অপেক্ষায় থাকে নাটোরের বনলতা সেন।
তিনি যেন কেবল এক নারী নন, বরং মানুষের অন্তরের সেই প্রশান্তির প্রতীক, যেখানে সব দুঃখ, নিঃসঙ্গতা আর ক্লান্তি মিলিয়ে যায় এক নীরব স্বস্তিতে। বনলতা সেন কবিতা তাই শুধু প্রেমের গল্প নয় এটি জীবনের যাত্রায় এক মায়াময় বিশ্রামের কাব্য।
বনলতা সেন কবিতা
হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস এর লক্ষণ কি কি ও প্রতিকারের উপায়
শেষকথা
বনলতা সেন কবিতা আমাদের শেখায়, জীবনের দীর্ঘ যাত্রার শেষে মানুষ আসলে খোঁজে একটু খানি শান্তি, স্নেহ আর আশ্রয়। যেমন কবি তার অস্থির, ক্লান্ত জীবনের অন্ধকারে খুঁজে পান বনলতা সেনের মুখে এক মৃদু আলো, তেমনি আমরা ও খুঁজি জীবনের ব্যস্ততায় সেই একটু খানি শান্তির স্পর্শ।
জীবনানন্দ দাশ এই কবিতার মাধ্যমে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন পৃথিবী যতই কঠিন হোক, কোথাও না কোথা ও সব সময় অপেক্ষা করে থাকে এক বনলতা সেন, যিনি আমাদের দেয় নীরব প্রশান্তি আর মায়াময় আশ্রয়।
.png)