আমাদের ছোট নদী কবিতা

আজকে ব্লগে আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমাদের ছোট নদী কবিতাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। বাংলা সাহিত্যের অপরিসীম রত্ন ভাণ্ডারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমাদের

আমাদের ছোট নদী কবিতা 

প্রিয় পাঠক, আজকে ব্লগে আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমাদের ছোট নদী কবিতাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। বাংলা সাহিত্যের অপরিসীম রত্ন ভাণ্ডারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমাদের ছোট নদী কবিতাটি একটি অনন্য সৃষ্টি। ছোট্ট একটি নদীকে কেন্দ্র করে কবি এমন এক জীবন্ত চিত্র এঁকেছেন, যা আমাদের গ্রামের প্রকৃতি, মানুষের জীবন, ঋতুর পরিবর্তন এবং শিশু মনের সরল আনন্দকে একসাথে ধারণ করে।

এই কবিতাটি প্রথম পাঠেই আমাদের শৈশবের মাঠঘাট, দিগন্ত জোড়া সবুজ ধানক্ষেত, আর কাদা মাখা নদীর ঘ্রাণে ভরা দিন গুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।

আমাদের ছোট নদী কবিতা

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে…  এই একটি পঙ্‌ক্তিই যেন পুরো গ্রামের জীবনকে জাগিয়ে তোলে। নদীর ধারে গাছের ছায়া, কাশ ফুলের দোল, বর্ষার বন্যা আর শীতের নিস্তব্ধতা সবই কবির কলমে জীবন্ত হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা করেননি, তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রকৃতি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাংলা সাহিত্যে আমাদের ছোট নদী কবিতার স্থান ঠিক সেই মধুর নীরবতার মতো যেখানে শিশু, প্রকৃতি আর সময় মিশে যায় এক নিঃশব্দ সুরে। এটি এমন এক কবিতা যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।

এই কবিতার প্রতিটি চরণে লুকিয়ে আছে এক অমলিন সরলতা যেখানে নদীর সাথে মিশে গেছে মানুষের হাসি-কান্না, জীবনের ছন্দ, আর প্রকৃতির অনন্ত রূপ। আমাদের ছোট নদী শুধু একটি শিশুতোষ কবিতা নয়, এটি আমাদের গ্রামীণ জীবনের কবিতারূপ ইতিহাস।

আরো পড়ুন: বনলতা সেন কবিতা

আমাদের ছোট নদী

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে

বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।

পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,

দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।


চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,

একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।

কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,

রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।


আর-পারে আমবন তালবন চলে,

গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।

তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাহিবার কালে

গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।


সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে

আচলে ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।

বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,

বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।


আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর

মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।

মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,

ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।

দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,

বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমাদের ছোট নদী কবিতাটি পাঠ করলে মনে হয়, আমরা যেন সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে ফিরে যাচ্ছি আমাদের সেই প্রিয় শৈশবে, যখন বিকেলের আলোয় নদীর জল ঝিলমিল করত, কাশফুলের ফাঁকে হাওয়ার ছোঁয়া লেগে থাকত, আর মনটা ভরে যেত এক অজানা আনন্দে।

এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ শুধু নদীকে দেখাননি, দেখিয়েছেন জীবনের স্রোতকে ও। ছোট নদীর বাঁক, বন্যার জল, শীতের শুষ্কতা, সবই যেন জীবনের ওঠানামার প্রতীক। কখনো প্রাচুর্য, কখনো শূন্যতা; কখনো আনন্দ, কখনো নিঃসঙ্গতা এভাবেই নদী আর জীবন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

আজকের কংক্রিটের শহরে দাঁড়িয়ে যখন আমরা আমাদের ছোট নদী পড়ি, তখন মনে হয় এই কবিতাই আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি ছিল আমাদের জীবনের প্রথম বন্ধু, প্রথম শিক্ষক, আর প্রথম কবিতা।

রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা শুধু শিশুদের নয়, প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের কবিতা। এটি আমাদের মাটির গন্ধ, আমাদের গ্রামের গান, আমাদের স্মৃতির জলরেখা।তাই আমাদের ছোট নদী পড়া মানে, নিজেকে একটু বেশি চিনে নেওয়া, সেই আপন বাংলার মাটিতে, যেখানে প্রতিটি নদী বয়ে আনে জীবনের সুর, আর প্রতিটি শব্দে বাজে আমাদের পরিচয়ের সঙ্গীত।

Disclaimer
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.

Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.

আইটি বিতান
Nilasha Barua

হাই! আমি নিলাশা, প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখি। পাঠকের জন্য সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য।নতুন তথ্য শেয়ার করতে এবং পাঠকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পছন্দ করি।

Post a Comment