অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ ও কোন ভিটামিনের অভাবে বেশি ঘাম হয়
প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করবো। আজকের আর্টিকেলে অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ ও কোন ভিটামিনের অভাবে বেশি ঘাম হয় তা নিয়ে বিস্তারিত জানার শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে।
মানুষের শরীরে ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে যখন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ঘাম হয়, তখন সেটি স্বাভাবিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম (Hyperhidrosis) কোনো বিশেষ শারীরিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। নিচে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করছি।
হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis)
অতিরিক্ত ঘামের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো হাইপারহাইড্রোসিস। এটি একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে ঘর্মগ্রন্থি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। সাধারণত হাত, পা, বগল ও মুখমণ্ডলে অতিরিক্ত ঘাম দেখা যায়। যদিও এটি প্রাণঘাতী রোগ নয়, তবে এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। বিশেষ করে রাতে ঘাম বেশি হয়। অনেক সময় নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া অবস্থায়ও রোগীর শরীরে হঠাৎ প্রচুর ঘাম দেখা যায়। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত ঘামকে গুরুত্ব সহকারে দেখা জরুরি।
থাইরয়েড সমস্যা
থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কারও হাইপারথাইরয়েডিজম থাকে, অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোন বেশি উৎপন্ন হয়, তবে শরীরের বিপাকক্রিয়া দ্রুত হয় এবং প্রচুর ঘাম হয়। এর পাশাপাশি রোগীর ওজন কমে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং অস্থিরতা অনুভূত হওয়াও সাধারণ লক্ষণ।
হৃদরোগ
অতিরিক্ত ঘাম হৃদরোগেরও একটি লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে হঠাৎ বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে ঘাম হলে এটি হার্ট অ্যাটাকের সতর্ক সংকেত হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সংক্রমণ ও জ্বর
বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ যেমন টিবি, ম্যালেরিয়া বা ভাইরাল জ্বরের সময় অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। বিশেষ করে রাতে হঠাৎ ঘাম দিয়ে ভিজে যাওয়াকে নাইট সুইটস বলা হয়, যা প্রায়ই গুরুতর সংক্রমণ বা লুকানো রোগের ইঙ্গিত দেয়।
স্নায়বিক সমস্যা
কিছু স্নায়বিক রোগ যেমন পার্কিনসন ডিজিজ বা স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতার কারণে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। কারণ এ ধরনের রোগ শরীরের স্বাভাবিক স্নায়ু-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
শুধু শারীরিক রোগ নয়, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ থেকেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। পরীক্ষার হলে, ইন্টারভিউর সময় বা ভয় পেলে অনেকেই অতিরিক্ত ঘামতে থাকেন। এটিকে স্ট্রেস-ইন্ডিউসড সুইটিং বলা হয়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি প্রতিদিন অস্বাভাবিকভাবে ঘাম হয়, রাতে ঘামে ভিজে যান, ঘামের কারণে দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয় বা অন্য উপসর্গ যেমন দুর্বলতা, হৃৎস্পন্দন, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন ভিটামিনের অভাবে বেশি ঘাম হয়?
অতিরিক্ত ঘামের পেছনে কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিনের অভাবও দায়ী হতে পারে। বিশেষ করে—
- ভিটামিন ডি অভাব : শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকলে হাড় দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি মাথার তালু ও শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব : ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন) ও বি১২ এর অভাব স্নায়বিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের অভাব : এগুলো খনিজ হলেও ভিটামিনের মতোই শরীরের সঠিক কাজের জন্য জরুরি। এদের ঘাটতিতেও অতিরিক্ত ঘাম দেখা দিতে পারে।
তাই নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত।
শেষকথা,
অতিরিক্ত ঘাম সবসময়ই সাধারণ বিষয় নয়। এটি শরীরের ভেতরে লুকানো রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই এটিকে অবহেলা না করে সময়মতো কারণ নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সঠিক যত্ন ও সচেতনতার মাধ্যমে অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিসক্লেইমার: এই আর্টিকেলে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য। এটি কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। যদি আপনার অতিরিক্ত ঘাম বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে দেরি না করে যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
.png)




