নগ্নবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে ?
প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে আমরা নগ্নবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে তা জানবো এই ব্লগে। নগ্নবীজী উদ্ভিদ হলো এমন সব উদ্ভিদ যাদের বীজ কোনো ধরনের ফল বা আবরণ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে না,বরং উন্মুক্ত অবস্থায় শঙ্কু বা বিশেষ গঠনের উপর অবস্থান করে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Gymnosperms। Gymnos শব্দের অর্থ হলো নগ্ন এবং sperma অর্থ বীজ অর্থাৎ, নগ্ন বীজযুক্ত উদ্ভিদ।
উদ্ভিদের বিবর্তন ইতিহাসের প্রাচীনতম বীজবাহী উদ্ভিদ হলো এই নগ্নবীজীরা। পৃথিবীতে ডায়নোসরের যুগে ও এরা নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রেখেছিল। ফল না থাকলে ও প্রজননের উন্নত গঠন এবং দৃঢ় কাঠামো তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে।
আরো পড়ুন: কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
নগ্নবীজী উদ্ভিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
নগ্নবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে ? এই প্রশ্নের উত্তর শুধু বীজের গঠন দিয়ে শেষ হয় না, আর ও অনেক বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা তাদের আলাদা পরিচয় দেয়। এদের শিকড়, কান্ড এবং পাতার গঠন সুস্পষ্ট ভাবে উন্নত। পাতা সাধারণত শক্ত, সুচাকৃতি এবং সবসময় সবুজ থাকে, যা পানি বাষ্পী ভবন কমাতে সহায়তা করে। এদের মধ্যে প্রকৃত ফুল থাকে না, ফলে পরাগায়ন এবং বীজ গঠন সম্পূর্ণরূপে শঙ্কুর সাহায্যে হয়।
এদের দেহ কাঠামোতে প্রধানত ট্র্যাক্সিড নামক বিশেষ কোষ পানিকে শীর্ষ পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে। শুষ্ক বা শীতল অঞ্চলেও শক্ত কাঠামো ও অভিযোজন ক্ষমতার কারণে এরা জীবন ধারণ করতে পারে। পৃথিবীর একেক প্রান্তে আবহাওয়ার সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতাই এদের সাফল্যের মূল রহস্য।
নগ্নবীজী উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ
নগ্নবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে বুঝতে হলে অবশ্যই এদের শ্রেণি বিভাগ জানা প্রয়োজন। সাধারণত চারটি প্রধান বিভাগে এদের ভাগ করা হয়,সাইকেডস, গিংকো, কোনিফারস এবং গনেটেলস।
সাইকেডস দেখতে অনেকটা খেজুর বা তালগাছের মতো, তবে তাদের প্রজনন শঙ্কুর মাধ্যমেই হয়। এই দলটি এখন বিলুপ্তির পথে হলে ও প্রাচীন যুগে প্রচুর ছিল। গিংকো দলের মধ্যে বর্তমানে কেবল একটি প্রজাতি Ginkgo biloba টিকে আছে, যাকে জীবন্ত জীবাশ্ম ও বলা হয়।
কোনিফারস সবচেয়ে সাধারণ দল যেখানে পাইন, সিডার, স্প্রুস, ফার এসব বিশাল বৃক্ষ দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বনজ সম্পদের বড় অংশই কোনিফারস-নির্ভর। গনেটেলস তুলনামূলক কম পরিচিত হলে ও এদের শারীর বৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ পায়।
নগ্নবীজী উদ্ভিদের প্রজনন প্রক্রিয়া
নগ্নবীজী উদ্ভিদের প্রজনন ব্যবস্থা জটিল হলেও অত্যন্ত কার্যকর। পুরুষ শঙ্কু পরাগরেণু উৎপাদন করে, আর স্ত্রী শঙ্কু ডিম্বাণু ধারণ করে। বাতাসের সাহায্যে পরাগরেণু স্ত্রী শঙ্কুতে পৌঁছে নিষেক সম্পন্ন হয়। ধীরে ধীরে একটি একটি উন্মুক্ত বীজ তৈরি হয়, যা কোনো ফলের ভেতরে নয়; বরং খোলা অবস্থায় শঙ্কুর পাতার উপরেই থাকে।
এই কারণে এদেরকে সত্যিকার অর্থেই নগ্ন বীজযুক্ত উদ্ভিদ বলা হয়। এদের জীবন চক্রে বৃহৎ বৃক্ষই স্পোরোফাইট পর্যায় এবং এটাই প্রধান। বীজ পূর্ণাঙ্গ হলে তা বাতাস বা অন্য বাহকের সাহায্যে দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নতুন জীবন জন্ম নেয়।
নগ্নবীজী উদ্ভিদের বসবাসের স্থান
পৃথিবীর নানান পরিবেশে এদের অভিযোজন ক্ষমতা সত্যিই উল্লেখ যোগ্য। শীত প্রধান অঞ্চল, পার্বত্য এলাকা এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় ও এদের দাপট দেখা যায়। তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী থেকে মরুভূমির সীমানা সব জায়গায়ই কোনো না কোনো নগ্নবীজী উদ্ভিদ নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।
এদের পাতা শক্ত এবং সুঁচালো হওয়ায় তুষারপাত বা পানি স্বল্পতার সময় ও জল ধারণে সহায়ক হয়। প্রকৃতির সঙ্গে এই অবিশ্বাস্য সম্পর্কই এদের এক অনন্য পরিচয় দেয়।
পরিবেশগত গুরুত্ব
প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ভারসাম্য রক্ষায় নগ্নবীজীদের অবদান অসাধারণ। বনাঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ গুলো এদের অন্তর্ভুক্ত, ফলে প্রাণীদের আবাসস্থল, খাদ্যের উৎস এবং পরিবেশের স্থিতিশীলতা সবকিছুতেই এদের ভূমিকা আছে। তারা বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে সাহায্য করে। পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত শিকড় মাটিকে আঁকড়ে ধরে ক্ষয় রোধ করে। প্রকৃতির এক নিঃশব্দ নায়ক বলতে পারো।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মানুষের জীবন আর অর্থনীতিতে নগ্ন বীজীদের অবদান ব্যাপক। পাইন ও সিডারের কাঠ আসবাবপত্র, নির্মাণকাজ, কাগজ উৎপাদন এসব ক্ষেত্রে অপরিহার্য। অনেক কোনিফারস গাছ থেকে পাওয়া রেজিন, টারপেন্টাইন, কাগজ শিল্পের প্রধান উপকরণ। আবার অনেক উদ্ভিদ ওষুধ শিল্পে ও ব্যবহৃত হয়।
শুধু তাই নয় সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে ও নগ্নবীজীরা বিখ্যাত। নানা পার্ক, সড়ক, বাসাবাড়ির বাগান এসব জায়গায় এদের দেখা যায়, যেখানে শুধু সৌন্দর্য নয়,পরিবেশের উন্নতিতে ও তারা ভূমিকা রাখছে।
পরিচিত উদাহরণ
বাংলাদেশে খুব বেশি দেখা না গেলেও বিশ্বজুড়ে অনেক বিখ্যাত নগ্নবীজী উদ্ভিদ রয়েছে। যেমন পাইন, দেবদারু, সিডার, সাইপ্রেস, স্প্রুস ইত্যাদি। উচ্চতায় আকাশ ছোঁয়া এসব গাছ প্রকৃতির সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক এবং মানব সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
নগ্নবীজী উদ্ভিদের বিবর্তনগত গুরুত্ব
প্রশ্ন উঠে, নগ্নবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে তা জানার পর কেন এর বিবর্তন এত আলোচনা হয়? কারণ তারা উদ্ভিদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন। স্পোরবাহি উদ্ভিদদের পরেই বিবর্তনে স্থায়ী বীজ গঠনের ধারণা নিয়ে এগিয়ে এসেছে নগ্নবীজীরা। এদের উদ্ভব না হলে হয়তো আজকের ফলবিশিষ্ট আবরিতবীজী উদ্ভিদের দেখা পেতাম না। তাই তারা বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় এক অনন্য অধ্যায়।
উপসংহার
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, নগ্নবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে ? তার সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো, এমন বীজবাহী উদ্ভিদ যাদের বীজ খোলা বা উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু তাদের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব, বিবর্তনগত ভূমিকা সব কিছু নিয়ে তারা বিশ্ব উদ্ভিদ জগতের এক বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে।
মানুষের জীবনধারা, প্রকৃতি ও গবেষণার প্রতিটি স্তরে এদের গুরুত্ব অনেক গভীর। তাই শিক্ষার্থী, গবেষক বা সাধারণ পাঠক সবাইয়ের জন্য নগ্নবীজী উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজনীয় ও আকর্ষণীয়।
.png)