ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে আমরা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। বাংলাদেশে বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গুর নাম শুনে অনেকের মনে ভয় ঢুকে যায়। শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় ডেঙ্গু এখন এক আতঙ্কের নাম। হাসপাতাল ভর্তি জ্বর আক্রান্ত রোগী, সংবাদে প্রতিদিন বাড়তে থাকা মৃত্যুর সংখ্যা, সব মিলিয়ে যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে।
কিন্তু এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব, যদি আমরা সবাই একটু সচেতন হই, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেই এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখি। ডেঙ্গু কোনো সাধারণ জ্বর নয়,এটি এক ভাইরাস জনিত রোগ যা মানুষের শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলে। তাই এখন সময় এসেছে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা।
ডেঙ্গু কীভাবে হয়
ডেঙ্গু রোগ মূলত Aedes aegypti নামের এক ধরনের মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশাটি সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায় এবং বিশেষভাবে পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। অনেকেই মনে করেন ময়লা পানিতেই মশা জন্মায়, কিন্তু ডেঙ্গু ছড়ানো মশা ঠিক তার উল্টো এরা বাসার ফুলের টব, ফেলে রাখা টায়ার, বালতি, পানির ট্যাংক বা এমনকি বোতলে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়।
একবার এই মশা যদি ডেঙ্গু ভাইরাস যুক্ত কোনো মানুষকে কামড়ায়, তবে তার শরীরে ভাইরাস চলে যায়, এবং পরবর্তীতে সেই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবেই অদৃশ্যভাবে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি, এক শহর থেকে আরেক শহরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, এবং তখন থেকেই শুরু হয় রোগের কষ্টকর সময়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় এক বিশেষ ধরনের মশার মাধ্যমে, যার নাম Aedes aegypti (এডিস মশা)। এই মশাটি অন্যদের মতো রাতে নয়, বরং দিনের বেলাতেই কামড়ায় বিশেষ করে সকালে ও বিকেলে। আর ও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই মশা পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। তাই অনেক সময় আমরা ভাবি ময়লা পানিতেই মশা জন্মে, কিন্তু ডেঙ্গুর মশা ঠিক তার উল্টো এরা সাধারণত ফুলের টব, টায়ার, বোতল, বালতি, কিংবা পানির ট্যাংকে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই মশা কেন ডেঙ্গু ছড়ায়? ব্যাপারটা এমন যদি কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষকে এই এডিস মশা কামড়ায়, তাহলে তার রক্তের সঙ্গে ভাইরাসটি মশার শরীরে প্রবেশ করে। এরপর সেই একই মশা যখন অন্য কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ায়, তখন মশার শরীরে থাকা ভাইরাস নতুন মানুষের রক্তে ঢুকে পড়ে। এইভাবেই এক আক্রান্ত মানুষ থেকে অন্য সুস্থ মানুষের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে যায়।
এই প্রক্রিয়াটা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এর ফল মারাত্মক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি এলাকা থেকে আরেকটিতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে তখনই শুরু হয় জ্বর, শরীর ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ।
আরো পড়ুন: কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডেঙ্গুর প্রতিকার
বর্তমানে ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা কার্যকর ভ্যাকসিন নেই। তাই চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক অর্থাৎ শরীরে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা হয়। জ্বরের সময় রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে, যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করতে পারে। প্রচুর পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস, স্যুপ বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে, কারণ জ্বর ও ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়।
জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খাওয়া নিরাপদ। কিন্তু আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ কখনো খাওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলো রক্তপাত বাড়াতে পারে। প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করে প্লেটলেট লেভেল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্লেটলেট কমে গেলে ও ভয় পাওয়ার কিছু নেই যতক্ষণ না পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক যত্ন নিলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া কোনো ওষুধ বা রক্ত সঞ্চালন করা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গুর প্রতিকার যতটা জরুরি, প্রতিরোধ তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার আক্রান্ত হলে কষ্ট অনেক, কিন্তু প্রতিরোধ করলে সেই কষ্ট থেকে নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচানো যায়। প্রথমেই বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলের টব, পুরনো টায়ার, বালতি, পানির বোতল বা ড্রাম এসব জায়গায় যেন কখনো পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন ঘরের প্রতিটি কোণ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
দিনে মশা থেকে বাঁচার জন্য মশারি ব্যবহার করা খুবই কার্যকর। অনেকেই ভাবেন মশারি শুধু রাতে দরকার, কিন্তু ডেঙ্গু মশা দিনের বেলাতেই কামড়ায়, তাই দুপুরে বিশ্রামের সময়েও মশারি ব্যবহার করা উচিত। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মশা প্রতিরোধক লোশন বা কয়েল ব্যবহার করাও সহায়ক।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ডেঙ্গু প্রতিরোধ কোনো একক মানুষের কাজ নয়, এটি পুরো সমাজের দায়িত্ব। আপনার বাড়ির পাশে পানি জমে থাকলে সেটি প্রতিবেশীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই নিজে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি আশেপাশের সবাইকে সচেতন করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ডেঙ্গুকে রোধ করতে পারে।
শেষ কথা
ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশের জন্য এক বড় জনস্বাস্থ্য সংকট। তবে আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মশার প্রজনন রোধ করা, এবং জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
মনে রাখবেন, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, তত দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ছোট্ট একটুখানি অসাবধানতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, আবার সামান্য সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে অমূল্য জীবন।তাই এখন থেকেই শুরু হোক সচেতনতার নতুন অধ্যায়, নিজে জানুন, অন্যকে ও জানাতে সহায়তা করুন।
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.
Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.
