অধ্যবসায় রচনা | অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট

আজকের ব্লগ পোষ্টে অধ্যবসায় রচনা শেয়ার করবো। ছাত্র ছাত্রীদের জীবনে একটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ রচনা হলো অধ্যবসায় রচনা | অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট

অধ্যবসায় রচনা | অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা কেমন আছো সবাই ? আজকের ব্লগ পোষ্টে অধ্যবসায় রচনা শেয়ার করবো। ছাত্র ছাত্রীদের জীবনে একটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ রচনা হলো অধ্যবসায় রচনা | অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট। কারণ, অধ্যবসায় এমন এক গুণ যা শুধু পড়াশোনায় নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।

আমরা অনেক সময় দেখি মেধাবীরা একবারে সফল হতে না পারলেও ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেলে তারা একদিন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। আবার কম মেধাবী ছাত্র ও যদি নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যায়, তবে সে বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি জীবন গঠনের ক্ষেত্রে ও অধ্যবসায় রচনা পড়া ও বোঝা ছাত্রছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায় রচনা

ভূমিকা

মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য যে গুণটির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তা হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজই স্থায়ীভাবে সফল হয় না। অনেকেই মনে করেন কেবল প্রতিভা বা মেধা থাকলেই মানুষ মহৎ কিছু অর্জন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মেধাবী মানুষ ব্যর্থ হতে পারে, আবার অল্প মেধার মানুষ ধারাবাহিক পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে।

অধ্যবসায় মানে হলো নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে ও আবার নতুন ভাবে শুরু করা। মানুষের জীবনে আনন্দ, উন্নতি, সুখ, সফলতা সব কিছুর পেছনেই অধ্যবসায়ের অমূল্য অবদান রয়েছে। তাই বলা যায়, অধ্যবসায় মানুষের জীবনের মূল ভিত্তি।

অধ্যবসায়ের সংজ্ঞা ও প্রকৃত অর্থ

অধ্যবসায় শব্দটি এসেছে ‘অধ্যবস’ ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো ধৈর্য ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাওয়া। কোনো কাজের ফলাফল তাৎক্ষণিক ভাবে না পেলে ও হতাশ না হয়ে, নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াকেই অধ্যবসায় বলে। সহজ কথায়, অধ্যবসায় হলো স্থির সংকল্প নিয়ে নিজের লক্ষ্যের দিকে অটলভাবে এগিয়ে চলা। জীবনের পথে নানা বাধা-বিপত্তি আসবেই।

কখনো ব্যর্থতা আসবে, কখনো সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এসবকে উপেক্ষা করে নিজের কাজে অটল থাকে, শেষ পর্যন্ত তিনিই সফল হন। উদাহরণ স্বরূপ, একজন কৃষক এক মৌসুমে ফসল নষ্ট হলে তিনি পরের মৌসুমে আবার নতুন বীজ বপন করেন। তার ধৈর্য, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ই একসময় ফলপ্রসূ হয়।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

ছাত্রজীবন হলো মানুষ গড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা সারাজীবন মানুষকে প্রভাবিত করে। ছাত্রজীবনে যদি অধ্যবসায়ের অভ্যাস তৈরি হয়, তবে ভবিষ্যৎ জীবনে যে কোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। শুধু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে বই হাতে নিলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।

বরং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত পড়াশোনা করা, কঠিন বিষয় গুলো বারবার অনুশীলন করা এবং একবার ব্যর্থ হলেও সাহস হারিয়ে না ফেলে পুনরায় চেষ্টা করাই একজন ছাত্রকে প্রকৃত সাফল্যের পথে নিয়ে যায়। একজন মেধাবী ছাত্র যদি অলস হয়, তবে তার প্রতিভা বৃথা যাবে। কিন্তু একজন সাধারণ ছাত্র ও যদি অধ্যবসায়ী হয়, তবে সে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে এবং জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সোনার চাবিকাঠি বলা যায়।

জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

অধ্যবসায় কেবল ছাত্রজীবনের জন্য নয়, বরং পুরো জীবনের জন্যই অপরিহার্য। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায় সফলতার সোপান তৈরি করে। কর্মজীবনে কেউ প্রথম থেকেই বড় পদে পৌঁছে যায় না; তাকে ধাপে ধাপে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে উপরে উঠতে হয়। ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একদিনে কোনো ব্যবসা বড় হয় না, দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তা সফল হয়।

পরিবারেও সুখ-শান্তি বজায় রাখতে ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ভূমিকা অপরিসীম। জীবনে প্রতিকূলতা, দুঃখ-কষ্ট আসবেই। কিন্তু যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এসবকে মোকাবিলা করতে জানে, সে-ই সত্যিকারের সফল মানুষ।

ব্যর্থতা ও অধ্যবসায়ের সম্পর্ক

ব্যর্থতা হলো সাফল্যের সোপান এই প্রবাদ বাক্যের গভীর অর্থ আছে। কোনো কাজের শুরুতেই সাফল্য আসে না। একবার, দু’বার বা বহুবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়। কিন্তু ব্যর্থতাকে ভয় না করে পুনরায় চেষ্টা করার মানসিকতাই হলো প্রকৃত অধ্যবসায়। ইতিহাসে অনেক মহামানব আছেন, যারা একাধিকবার ব্যর্থ হয়ে ও হাল ছাড়েননি। থমাস এডিসন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে এক হাজারের ও বেশি পরীক্ষা ব্যর্থ করেছিলেন।

কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। অবশেষে তাঁর অধ্যবসায়ই তাঁকে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী বানিয়েছিল। সাহিত্য জগতের কবি-সাহিত্যিকরা ও প্রথম দিকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু অধ্যবসায়ের কারণে তাঁরা আজ বিশ্ববাসীর কাছে সম্মানিত। তাই ব্যর্থতা হলো শেষ নয়, বরং এটি হলো নতুন করে সফলতার পথে যাত্রার সুযোগ।

অধ্যবসায়ের সুফল

অধ্যবসায় মানুষের জীবনে অসংখ্য সুফল নিয়ে আসে। প্রথমত, এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। একবার কোনো কাজে সফল হলে, মানুষ ভবিষ্যতে আরও সাহসী হয়। দ্বিতীয়ত, অধ্যবসায় ধৈর্য ও সহনশীলতা শেখায়। মানুষ সহজে হতাশ হয় না, কষ্টকে সহ্য করতে শেখে। তৃতীয়ত, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে, একজন অধ্যবসায়ী ব্যবসায়ী সফল উদ্যোক্তা হতে পারে, আর একজন অধ্যবসায়ী খেলোয়াড় বিশ্বজয় করতে পারে। এছাড়া, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে ও সম্মান পায়। কারণ, অধ্যবসায়ী মানুষ কেবল নিজের উন্নতি করে না, বরং সমাজ ও দেশের উন্নতিতে ও অবদান রাখে।

সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অধ্যবসায়ের ভূমিকা

অধ্যবসায় শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি সমাজ যদি অধ্যবসায়ী মানুষে পরিপূর্ণ হয় তবে সেই সমাজ কখনো পিছিয়ে থাকবে না। যেমন শিক্ষকরা ধৈর্য ধরে ছাত্রদের পড়ালে একটি শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি হয়, যা সমাজের উন্নতি সাধন করে।

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও অধ্যবসায়ী নেতাদের প্রয়োজন। তারা তাড়া হুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেন না, বরং ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করেন এবং জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যান। একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে তার নাগরিকদের অধ্যবসায়ী হওয়া অপরিহার্য।

ধর্মীয় শিক্ষায় অধ্যবসায়

ধর্মীয় শিক্ষাতে ও অধ্যবসায়কে মহৎ গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে ধৈর্য এবং নিয়মিত চেষ্টা করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। হিন্দুধর্মে ও কর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, যা মূলত অধ্যবসায়ের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। 

বৌদ্ধধর্মে বলা হয়েছে বারবার চেষ্টা করার মাধ্যমেই নির্বাণ লাভ করা যায়। খ্রিস্টধর্মে ও অধ্যবসায়কে পরম গুণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সব ধর্মই একবাক্যে স্বীকার করেছে, অধ্যবসায় হলো মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়।

আমাদের জীবনে শিক্ষণীয় দিক

অধ্যবসায় এমন একটি গুণ, যা ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা উচিত। ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে অধ্যবসায় চর্চা করা দরকার। খেলোয়াড়দের প্রতিদিন অনুশীলনের মাধ্যমে অধ্যবসায় গড়ে তুলতে হয়। শিল্পী, সংগীতজ্ঞ বা সাহিত্যিকদেরও প্রতিদিন কাজ করার মাধ্যমে এই গুণ অর্জন করতে হয়।

জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। কেবল অধ্যবসায়ই কঠিন কাজকে সহজ করে তোলে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায়কে অভ্যাসে পরিণত করা।

উপসংহার

সবশেষে বলা যায়, অধ্যবসায় হলো জীবনের সোনার চাবিকাঠি। প্রতিভা, যোগ্যতা বা জ্ঞান যত বড়ই হোক না কেন, অধ্যবসায় ছাড়া তার কোনো মূল্য নেই। ইতিহাসে যেসব মহাপুরুষ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন, তাঁরা সবাই অধ্যবসায়কে অবলম্বন করেছিলেন। 

ব্যর্থতাকে ভয় না করে, ধৈর্য ধরে নিরন্তর চেষ্টা করাই সফলতার আসল রহস্য। তাই ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অধ্যবসায়ী হওয়া উচিত। অধ্যবসায়ী মানুষই সত্যিকার অর্থে জীবনের প্রকৃত বিজয়ী।

শেষকথা

সব মিলিয়ে বলা যায়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একবার ব্যর্থ হলে হতাশ না হয়ে আবার নতুনভাবে চেষ্টা করার মানসিকতাই আমাদের সাফল্যের পথ তৈরি করে। তাই ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন সবখানেই অধ্যবসায়কে অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। আশা করি এই অধ্যবসায় রচনা ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে এবং একই সঙ্গে জীবনে সফল হওয়ার প্রেরণা ও যোগাবে।

Disclaimer
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.

Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.

আইটি বিতান
Nilasha Barua

হাই! আমি নিলাশা, প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখি। পাঠকের জন্য সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য।নতুন তথ্য শেয়ার করতে এবং পাঠকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পছন্দ করি।

Post a Comment