কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা 20 পয়েন্ট | কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকের এই ব্লগ পোস্টে কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা 20 পয়েন্ট এর তোমাদের সাথে শেয়ার করবো। মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই, আর খাদ্যের প্রধান উৎস হলো কৃষি। তাই যুগে যুগে কৃষিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মানুষের সভ্যতা ও সমাজ। একসময় কৃষিকাজ ছিল সম্পূর্ণ প্রথাগত, যেখানে ফলন নির্ভর করত প্রকৃতি আর কৃষকের অভিজ্ঞতার উপর।
কিন্তু বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় সেই কৃষি আজ বদলে গেছে আমূল। আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত বীজ, বৈজ্ঞানিক সেচ ব্যবস্থা ও গবেষণার কারণে কৃষি এখন হয়েছে আরও ফলনশীল ও কার্যকর। শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় বা লেখার প্রয়োজনে কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা 20 পয়েন্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ রচনার মাধ্যমে শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতি নয়, কৃষির সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্কও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। নিচে কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা নিচে দেওয়া হলো ।
কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা 20 পয়েন্ট
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
কৃষিকাজে বিজ্ঞান
ভূমিকা
মানুষের জীবনের প্রধান চাহিদার মধ্যে খাদ্য সবার আগে প্রথম স্থান অধিকার করে। অন্ন ছাড়া জীবনধারণ কল্পনাই করা যায় না। আর এই অন্ন উৎপাদনের প্রধান উৎস হলো কৃষিকাজ। তাই বলা হয় কৃষিই জীবনের মূল ভিত্তি। অতীতে কৃষিকাজ ছিল একে বারেই কষ্টসাধ্য ও সীমিত ফলনশীল। কৃষকরা কেবল নিজের অভিজ্ঞতা আর প্রজন্ম থেকে পাওয়া জ্ঞানের উপর নির্ভর করে ফসল উৎপাদন করতেন।
ফলে কখনো ফলন হতো, কখনো হতো না। খরা, বন্যা বা পোকামাকড়ের আক্রমণে অনেক সময় মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত। ফলে মানুষের মধ্যে দেখা দিত দুর্ভিক্ষ। কিন্তু বিজ্ঞান যখন কৃষিক্ষেত্রে প্রবেশ করল, তখন থেকে কৃষির চেহারাই বদলে গেল। বিজ্ঞানের দান কৃষককে দিল নতুন আশার আলো। আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত বীজ, সেচ ব্যবস্থা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কারণে আজ কৃষিকাজ হয়েছে সহজ, ফলন বেড়েছে বহু গুণ, আর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়েছে বাংলাদেশ।
কৃষি ও সভ্যতা
মানব সভ্যতার সূচনা কৃষির হাত ধরেই। প্রাচীনকালে মানুষ ছিল একেবারে যাযাবর। তারা শিকার করে, ফলমূল কুড়িয়ে কিংবা মাছ ধরে জীবন ধারণ করত। তখন তাদের জীবন ছিল অস্থির ও অনিশ্চিত। কিন্তু যখন মানুষ কৃষির কলা আবিষ্কার করল, তখনই তারা প্রথম স্থায়ী ভাবে বসতি স্থাপন শুরু করল।
জমি পরিষ্কার করে চাষ করা, বীজ বপন করা, সেচ দেওয়া এবং ফসল সংগ্রহ করার মাধ্যমে মানুষ বুঝল শস্য উৎপাদন করলে ক্ষুধা নিবারণ করা সম্ভব। কৃষির মাধ্যমেই মানুষ স্থায়ী জীবন, গ্রাম, নগর ও রাষ্ট্র গড়ে তোলে। তাই সভ্যতার অগ্রযাত্রায় কৃষির অবদান অপরিসীম। যদি কৃষি না থাকত, তবে মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশও সম্ভব হতো না।
কৃষির তাৎপর্য
কৃষির গুরুত্ব শুধুমাত্র খাদ্য উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়। আমরা ভাত খাই ধান থেকে, রুটি খাই গম থেকে, ডাল, শাকসবজি ও তেল বীজ ও কৃষির মাধ্যমে পাওয়া যায়। আবার পোশাকের কাঁচামাল তুলা, পাট ও রেশমও আসে কৃষি থেকে। আমাদের দেশের শিল্প-কারখানার একটি বড় অংশ কৃষি ভিত্তিক।
কাগজ কল, চিনি কল, তেল কল, পাটকল সবই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি শুধু খাদ্য ও কাঁচামালই সরবরাহ করে না, বরং জাতীয় অর্থনীতিকে ও সচল রাখে। কৃষিই আমাদের গ্রামীণ সমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয় এবং দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করে।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ দৃশ্যমান। চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিনোদন, শিল্প সবখানেই বিজ্ঞানের কল্যাণ পৌঁছে গেছে। কৃষি ও বিজ্ঞানের এই জয়যাত্রা থেকে বঞ্চিত হয়নি। বিজ্ঞানের আবিষ্কার কৃষিকে করেছে আধুনিক ও যুগোপযোগী। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবিত হয়েছে, যা অল্প সময়ে বেশি ফলন দেয়।
উন্নত সেচ ব্যবস্থা, রাসায়নিক সার, রোগ প্রতিরোধক ঔষধ এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষিকে করেছে আরও সহজ, দ্রুত ও ফলপ্রসূ। বলা যায়, বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ছাড়া আজকের কৃষিকে কল্পনাই করা যায় না।
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রভাব
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রভাব সত্যিই বিস্ময়কর। আগে যেখানে এক বিঘে জমিতে মাত্র ৮-১০ মণ ধান হতো, সেখানে এখন বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে হয় ২৫-৩০ মণ পর্যন্ত। সেচ প্রযুক্তির কারণে খরার সময় ও ফসল বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি সার জমির উর্বরতা বাড়িয়ে তুলছে। কীটনাশক ফসলকে রক্ষা করছে পোকামাকড় থেকে।
আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, ধান কাটা যন্ত্র ও হারভেস্টার কৃষকের শ্রমকে সহজ করেছে এবং উৎপাদন বাড়িয়েছে বহুগুণ। এসবই সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের অবদানেই।
বাংলাদেশে কৃষি
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। জনসংখ্যার অধিকাংশই এখনো কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। আমাদের খাদ্যের প্রধান উৎস ধান, গম, ভুট্টা ও ডাল কৃষকেরা চাষ করে থাকেন। গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। দেশের শিল্পের কাঁচামাল ও কৃষি থেকে আসে। স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞানের প্রয়োগে গুরুত্ব দিয়েছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগে যেখানে আমাদের বারবার বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হতো, এখন আমরা দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু ফসল বিদেশে ও রপ্তানি করছি।
কৃষি গবেষণায় বিজ্ঞান
কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা বিজ্ঞানকে আর ও শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই), বিএডিসি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাতের ধান, গম, ভুট্টা, সবজি ও ফল আবিষ্কার করেছে।
এসব ফসল কম সময়ে বেশি ফলন দেয়, রোগ প্রতিরোধী এবং জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল। গবেষণার মাধ্যমে হাইব্রিড জাতের বীজও তৈরি হয়েছে, যা কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
কৃষিতে বিজ্ঞানের দান
কৃষিতে বিজ্ঞানের দান অসংখ্য। কৃষকরা আজ হাতে লাঙল নিয়ে নয়, বরং আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জমি চাষ করছেন। উন্নত বীজ কৃষিকে দিয়েছে বেশি ফলন। রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা বাড়িয়েছে। আধুনিক সেচ ব্যবস্থা খরা অঞ্চলেও ফসল উৎপাদন সম্ভব করেছে। রোগ প্রতিরোধক ঔষধ ফসলকে রক্ষা করছে পোকামাকড় ও ব্যাধি থেকে। বলা যায়, বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কার কৃষিকে করেছে সমৃদ্ধ।
বিদেশে কৃষিতে বিজ্ঞান
উন্নত দেশ গুলোতে কৃষি সম্পূর্ণ যান্ত্রিকী করণ হয়ে গেছে। সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকেরা একাই বিশাল মাঠের চাষ, বপন, সেচ ও ফসল সংগ্রহ করতে পারেন। তারা জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন জাত আবিষ্কার করছে, যা অধিক ফলনশীল ও দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের দেশও সেই ধারা অনুসরণ করে ধীরে ধীরে কৃষিকে যান্ত্রিকী করণের পথে এগোচ্ছে।
কৃষিকার্যে বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগ
বাংলাদেশের কৃষিকে আরও উন্নত করতে হলে বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন কৃষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান, গবেষণার পরিধি বাড়ানো, সাশ্রয়ী মূল্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহ, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষকদের বৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী করা। তখনই কৃষি সত্যিকার অর্থে হবে যুগোপযোগী।
দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশের কৃষিতে বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ধান উৎপাদনে বিপ্লব। স্বাধীনতার আগে যেখানে দেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হতো, সেখানে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, সবজি, ফলমূল উৎপাদনে ও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ দেশ গুলোর একটি। এগুলোই প্রমাণ করে যে কৃষিতে বিজ্ঞানের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ হলো কৃষি, আর আধুনিক কৃষির প্রাণ হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় কৃষি পেয়েছে নতুন মাত্রা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন আমরা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছি। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে, যাতে বাড়তি ফসল বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়। তাই বলা যায় বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষিই পারে আমাদের বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী কৃষি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
.png)