গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় ?

আজকে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় ? এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জীবনের একটি সংবেদনশীল,

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় ?

প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিক নিয়ে আলোচনা করবো। আজকে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় ? এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জীবনের একটি সংবেদনশীল এবং বিশেষ সময়। এ সময়ে মায়ের শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে এবং তার প্রভাব পড়ে শিশুর উপরে ও। এই সময়ের একটি বড় সমস্যা হলো রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া।

অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন না থাকায় মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই প্রশ্ন আসে, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়? এই প্রশ্নের উত্তর জানলে মায়েরা সচেতন হতে পারবেন, সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারবেন এবং অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

হিমোগ্লোবিন কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের লোহিত কণিকায় থাকা একটি বিশেষ প্রোটিন যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অক্সিজেন ছাড়া শরীরের কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। গর্ভাবস্থার সময় মায়ের শরীরকে শুধু তার নিজের জন্য নয়, গর্ভের শিশুর জন্যও পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছে দিতে হয়। 

এজন্য হিমোগ্লোবিন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা অত্যন্ত জরুরি। যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে মা দুর্বল, ক্লান্ত ও অবসন্ন বোধ করেন এবং শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন শুধু মায়ের নয়, শিশুর জীবনকেও সরাসরি প্রভাবিত করে।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা

গর্ভাবস্থার সময় হিমোগ্লোবিনের একটি নির্দিষ্ট স্বাভাবিক মাত্রা রয়েছে। এই মাত্রার নিচে নামলে চিকিৎসকরা সেটিকে অ্যানিমিয়া বলে থাকেন।

  • প্রথম ট্রাইমেস্টারে মায়ের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি।
  • দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে এটি কিছুটা কমে ১০.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি ধরা হয়।
  • তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে আবারও তা হওয়া উচিত ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি।

যদি হিমোগ্লোবিন ১০ গ্রামের নিচে নেমে যায়, তবে সেটি মা এবং শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ অবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দীর্ঘ সময় হিমোগ্লোবিন কম থাকলে প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শিশুর ওজন কম হওয়া কিংবা প্রি-টার্ম ডেলিভারির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?

চিকিৎসকরা সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এবং মায়ের সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেন রক্ত দেওয়া প্রয়োজন কিনা। সাধারণতঃ

যদি হিমোগ্লোবিন ৭ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে নেমে যায়, তখন মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, যা মারাত্মক জটিলতার কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় চিকিৎসকরা রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন।

যদি হিমোগ্লোবিন ৬ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে নেমে যায়, তাহলে সেটি মারাত্মক জীবনঘাতী পরিস্থিতি। এ সময় মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি এতটাই বেড়ে যায় যে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকে না।

তবে মনে রাখতে হবে, রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র সংখ্যার উপর নির্ভর করে না। মায়ের উপসর্গ যেমন অতিরিক্ত ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ধড়ফড়ানি, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা এসব বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাই নিয়মিত চেকআপ করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়াই হবে সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

হিমোগ্লোবিন কমার প্রধান কারণ

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি খুব সাধারণ। সবচেয়ে বড় কারণ হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতি। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা দ্বিগুণ হয়। পর্যাপ্ত আয়রন না পেলে রক্ত তৈরি হতে পারে না এবং হিমোগ্লোবিন কমে যায়।

এছাড়াও:

  • ফোলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি
  • হজমে সমস্যা বা কৃমি সংক্রমণ
  • অতিরিক্ত বমি বা খাবারে অনীহা
  • পূর্ব থেকেই রক্তশূন্যতা থাকা

এসব কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যায় এবং মা অ্যানিমিয়ায় ভুগতে শুরু করেন।

হিমোগ্লোবিন কমলে করণীয়

হিমোগ্লোবিন কমে গেলে সবসময় রক্ত দেওয়ার দরকার হয় না। অনেক সময় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সঠিক ওষুধের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। এজন্য গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।

চিকিৎসক প্রয়োজনে আয়রন ট্যাবলেট, ফোলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যুক্ত করতে হবে।

হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়ক খাবার

  • লাল মাংস, গরু বা খাসির লিভার
  • মাছ ও ডিম
  • সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, কলমি শাক
  • মটরশুটি, মসুর ডাল
  • খেজুর, কিশমিশ, আখের গুড়
  • আয়রন সমৃদ্ধ সিরিয়াল ও পরিপূরক খাবার

এছাড়া, আয়রনযুক্ত খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কমলা, লেবু, আমলকি) খেলে শরীর দ্রুত আয়রন শোষণ করতে পারে।

রক্ত দেওয়া কি সবসময় সমাধান?

অনেকেই মনে করেন রক্ত দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। রক্ত দেওয়া একটি জরুরি পরিস্থিতির অস্থায়ী সমাধান। এটি মাকে সাময়িক ভাবে শক্তি যোগায় এবং শিশুর জন্যও কিছুটা সুরক্ষা দেয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।

শেষকথা,

সব মিলিয়ে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন ৭ গ্রামের নিচে নেমে গেলে সাধারণত রক্ত দেওয়া হয় এবং ৬ গ্রামের নিচে নেমে গেলে তা জীবনঘাতী হয়ে ওঠে। তবে প্রত্যেক গর্ভবতী মায়ের অবস্থা ভিন্ন, তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র চিকিৎসকের। এজন্য নিয়মিত চেকআপ, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই মা ও শিশুর সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।

ডিসক্লেইমার :এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক এবং সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লেখা। এখানে দেওয়া তথ্য কোনো ভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে বা রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র চিকিৎসকই নিতে পারবেন।

Disclaimer
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.

Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.

আইটি বিতান
Nilasha Barua

হাই! আমি নিলাশা, প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখি। পাঠকের জন্য সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য।নতুন তথ্য শেয়ার করতে এবং পাঠকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পছন্দ করি।

Post a Comment