বিজয় দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট | মহান বিজয় দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট
প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগ পোষ্টে বিজয় দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট এর শেয়ার করবো তোমাদের সাথে।বাংলাদেশের ইতিহাসে বিজয় দিবস একটি অমর ও গৌরবময় দিন। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আমরা এই দিনটিকে জাতীয় ভাবে পালন করি, কারণ ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় কেবল একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের আত্মত্যাগ, সাহস ও স্বাধীনতার প্রতীক। তাই বিজয় দিবস রচনা শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু একটি লেখা নয়, বরং স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানার একটি মাধ্যম। এখানে আমরা বিজয় দিবসের পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয়ের গুরুত্ব ও আমাদের কর্তব্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বিজয় দিবস রচনা
ভূমিকা
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় একটি দিন। এই দিনে বাংলাদেশ দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই ১৬ ডিসেম্বরকে আমরা মহান বিজয় দিবস হিসেবে পালন করি। এই দিন আমাদের গৌরব, সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
স্বাধীনতার পটভূমি
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অংশ হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিকে অবহেলা করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় চেতনার ভিত গড়ে দেয়। এরপর ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা স্বাধীনতার রূপরেখা তৈরি করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়, আর তখনই শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ
নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লাখ শহীদ তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। লক্ষ লক্ষ মা-বোন সম্মান হারান এবং কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেন। মুক্তিকামী বাঙালি মুক্তিবাহিনী গঠন করে সাহসিকতার সাথে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করলে যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় পাকিস্তানি সেনারা পরাজিত হয়।
বিজয়ের দিন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনারা আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণ করে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য
বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রতীক। এই দিন আমাদের শেখায়:—
- শহীদদের ত্যাগকে স্মরণ করতে।
- দেশপ্রেম ও ঐক্যের শিক্ষা নিতে।
- স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য বুঝতে।
- এই দিনটি জাতিকে আত্মত্যাগের শক্তি দেয় এবং উন্নত ভবিষ্যতের পথ দেখায়।
বিজয় দিবস উদযাপন
প্রতি বছর জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। ভোরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ও রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আমাদের কর্তব্য
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো:—
- শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
- দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করা।
- শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
- নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখানো।
উপসংহার
বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের দিন। এ দিন আমাদের মুক্তি, গৌরব ও আত্মত্যাগের প্রতীক। তাই আমরা সবাইকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায় এবং আমরা একসাথে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
শেষকথা
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা বিজয় দিবস রচনা ২০ পয়েন্ট শুধু একটি প্রবন্ধ নয়, এটি আমাদের মুক্তির সংগ্রামের দলিল। ১৬ ডিসেম্বর রচনা লেখার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বুঝতে শেখে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজয় অর্জন করা যতটা কঠিন, স্বাধীনতাকে রক্ষা করা তার চেয়ে ও কঠিন।
তাই শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বিজয় দিবস আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, সাহস জোগায় এবং ভবিষ্যতের পথ দেখায়। আসুন, আমরা সবাই এই দিনে প্রতিজ্ঞা করি শহীদদের রক্ত যেন কোনোদিন বৃথা না যায়।
.png)