কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf দেখুন

এই ব্লগে কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ জগতে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা মানুষের মনে গভীর ছাপ রেখে যায়।

কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf

প্রিয় পাঠক, এই ব্লগে কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ জগতে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা মানুষের মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। বিশেষ করে কবর কবিতা পাঠকের হৃদয়ে এক অদৃশ্য স্পন্দন সৃষ্টি করে। মৃত্যুর অনিবার্যতা, জীবনের অস্থায়ীত্ব এবং প্রিয়জনের হারানোর বেদনা এই সব বিষয় কবিতার প্রতিটি লাইনেই ফুটে উঠেছে। কিন্তু এটি শুধুই বিষণ্ণতার গল্প নয়, বরং জীবনকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার এক সূক্ষ্ম বার্তা বহন করে।

এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে পাঠক শুধু নজরুলের অসাধারণ কাব্যশৈলীই অনুভব করবেন না, বরং জীবন, মৃত্যু এবং ভালোবাসার সম্পর্কে ও নতুনভাবে ভাবতে পারবেন। কবর কবিতা সম্পূর্ণ PDF পড়া মানে শুধু কবিতা পড়া নয়, এটি জীবনকে আরও গভীরভাবে বুঝার একটি সুযোগ। নিচে কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf দেওয়া হলো: 

আরো পড়ুন: অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন পত্র pdf

আরো পড়ুন: শীতের সকাল অনুচ্ছেদ ও রচনা

কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf

কবর কবিতা

জসীম উদ্‌দীন

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।

এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,

পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।

এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,

সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!

সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি

লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।

যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত

এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।

এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে

ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।


বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা

আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।

শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,

পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।

দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,

সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!

হেস না­ হেস না­ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,

দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!

নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,

পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখিজলে।

আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,

কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!

হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,

আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।


তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি

যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।

শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,

গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।

এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,

গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।

মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,

আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।


এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,

কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।

সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,

বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।

ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম বাছা শোও,

সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?

গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,

তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?

তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,

সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!


তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,

তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।

গাছের পাতার সেই বেদনায় বুনো পথে যেতো ঝরে,

ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-মাঠখানি ভরে।

পথ দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,

চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।

আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,

হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।

গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,

চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।


ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,

কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল খুজি।

তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,

হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।

মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, বাছারে যাই,

বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;

দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,

কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।

ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন­জলে,

কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ­ব্যথার ছলে।


ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল­ আমার কবর গায়

স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।

সেই যে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,

পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।

জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু­ছায়,

গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়।

জোনকি­মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,

ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।

হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;

ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!


এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,

বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।

এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে,

হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।

খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে

দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।

শ্বশুর তাহার কশাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে

অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।

সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,

কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।

বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,

কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ­বীণ!

কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,

এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে।


ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,

কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।

বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,

পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।

হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়।

আমার বু­জীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।


হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের মেয়ে,

রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।

ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,

অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!

ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,

তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে।

বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,

রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।


একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,

ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।

সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে।

কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।

আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,

দাদু! ধর­ধর­ বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।

এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,

কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম­ভোলা মোর যাদু।

আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,

দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে !


ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,

অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।

মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,

মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।

জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।

ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু­ব্যথিত প্রাণ।

শেষকথা

কবর কবিতা কেবল একটি কবিতা নয়, এটি জীবনের অস্থায়ীত্ব, প্রিয়জনের হার এবং মৃত্যুর সঙ্গে মানিয়ে চলার অনুভূতির এক চিরন্তন সাক্ষ্য। এই কবিতার প্রতিটি লাইন পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলে, যেন জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং ভালোবাসার মূল্য আরও স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়।

অনলাইনে সহজে পাওয়া কবর কবিতা সম্পূর্ণ PDF পাঠককে এই অসাধারণ সাহিত্যকর্মের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়। পড়ুন, অনুভব করুন এবং জীবনের এই অনন্ত সত্যকে নতুনভাবে চোখে দেখুন।

কবর কবিতা সম্পূর্ণ pdf

——Disclaimer——

আইটি বিতান এ যে পিডিএফ ইবুক প্রকাশ করা হয়েছে সেটার স্বত্বাধিকারী আইটি বিতান নয়। বইটি অনলাইন বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে পাঠকদের মাঝে এডুকেশন Purpose শেয়ার করা হয়েছে। আমরা নিজেরা কোন ইবুক তৈরি করিনা কিংবা পাঠকদের ইবুক পাঠে উৎসাহ ও প্রদান করছিনা। 

পিডিএফ কখনো হার্ডকপির বিকল্প হতে পারেনা এবং দীর্ঘক্ষণ পড়ার জন্য পিডিএফ বই উপযোগী ও নয়। তাই আমরা সবসময় পাঠকদেরকে অনুরোধ করি হার্ডকপি কিনে পড়ার জন্য। এতে লেখক এবং প্রকাশকরা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবে এবং আমরা ও নতুন নতুন লেখা পাবো।

আইটি বিতান এ প্রকাশিত কোন পিডিএফ বই নিয়ে যদি কোনো প্রকার আপত্তি থাকে, অনুগ্রহ পূর্বক আমাদের কন্টাক্ট পেইজে যোগাযোগ করুন। আইটি বিতান লেখক/প্রকাশের কখনো কোনো ক্ষতি চাই না। খুব শীঘ্রই আইটি বিতান আপনার দাবীটি নিস্পত্তি করবে।

প্রসঙ্গত, এখানে প্রদত্ত তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে এটি ১০০% নির্ভুল বা সর্বদা আপডেটেড নাও হতে পারে। ধন্যবাদ।

Disclaimer
We strive to provide accurate information, but we cannot guarantee that all details are always fully updated.

Affiliate Disclosure
This post may contain affiliate links. We may receive a commission if you make a purchase through these links, at no extra cost to you. For more details, please visit our Disclaimer Page.

আইটি বিতান
Nilasha Barua

হাই! আমি নিলাশা, প্রযুক্তি, গ্যাজেট রিভিউ এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখি। পাঠকের জন্য সহজ, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করাই আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য।নতুন তথ্য শেয়ার করতে এবং পাঠকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পছন্দ করি।

Post a Comment